বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ, যা অভিন্ন-অবিচ্ছেদ্য। যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে জন্ম হতো না স্বাধীন বাংলাদেশের। যার জাদুকরি মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকা।
অথচ সেই মহান স্বাধীনতার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তখন জাতি হিসেবে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াই? খুনিদের বুলেট সেদিন নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল কিংবা পরিবারের নিরপরাধ নারীদেরও ছাড় দেয়নি। পৃথিবীর আর কোথায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল কি না তা জানা নেই। তবে ‘লজ্জিত জাতি’ হিসেবে ইতিহাসের জঘন্য এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত আত্মস্বীকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে এনে ফাঁসিতে ঝোলানো এখন সময়ের প্রধান দাবি। খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা গেলেও অন্তত কিছুটা হলেও জাতির কলঙ্ক মোচন হবে। তাই বঙ্গবন্ধুর চেতনা অন্তরে ধারণ করে খুনিদের ফেরাতে ও ফাঁসি কার্যকরে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু আগস্ট এলেই হবে আলোচনা আর বছরজুড়ে থাকবে না তৎপরতা, সেটা যেন না হয়।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সেদিন ভোরে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, খুনিরা বুলেট চালিয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্রের বুকে। ঝাঁঝরা করেছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিক্রিয়ায় জার্মান রাজনীতিক ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেছিলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’
অন্যদিকে কিউবার বিপ্লবের প্রধান নেতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’ এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত গভীর দুঃখ, ভারাক্রান্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’